বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন একটি মানসিক সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বিষণ্নতা শুধু দুঃখের অনুভূতি নয়, এটি মনের গভীরে স্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং দৈনন্দিন কাজগুলোতে অনাগ্রহ তৈরি করে। অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না যে আমরা বিষণ্নতার শিকার হচ্ছি। এখানে ৭টি সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা থেকে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি বিষণ্নতার সম্মুখীন হতে পারেন:
১. দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ বা শূন্যতার অনুভূতি
দীর্ঘ সময় ধরে দুঃখী, হতাশ বা শূন্য অনুভব করা বিষণ্নতার প্রধান লক্ষণগুলির একটি। এমনকি আপনার জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আপনি মনে করতে পারেন যে কিছুই ঠিক হচ্ছে না বা কোনো কিছুই আপনাকে আনন্দ দিতে পারছে না। এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিষণ্নতার দিকে ইঙ্গিত করে।
২. আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
আপনার প্রিয় কাজগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যা কিছুতে আনন্দ পেতেন, যেমন- বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বই পড়া, বা কোনো সৃজনশীল কাজ—তাতে আর কোনো আগ্রহ অনুভব না করা বিষণ্নতার পরিচয় হতে পারে। এটি আপনার সম্পর্ক, কাজ এবং জীবনের অন্যান্য দিকেও প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. শারীরিক ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা
বিষণ্নতা কেবল মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি ক্রমাগত ক্লান্তি বা শক্তিহীন অনুভব করতে পারেন। এমনকি দৈনন্দিন সহজ কাজগুলোও আপনার জন্য ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। ঘুম থেকে উঠতে বা কোনো কাজ করতে ইচ্ছে না হওয়া বিষণ্নতার একটি লক্ষণ হতে পারে।
৪. মনোযোগের অভাব ও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অসুবিধা
যখন বিষণ্নতায় ভুগছেন, তখন চিন্তা স্পষ্ট থাকে না এবং মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি কোনো বিষয়ে ফোকাস করতে পারেন না বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সমস্যা অনুভব করতে পারেন। এই লক্ষণটি আপনার কর্মদক্ষতা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. ঘুমের সমস্যাগ্রস্ততা
বিষণ্নতা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেউ কেউ ঘুমের অভাবে ভোগেন (ইনসমনিয়া), আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত ঘুমান। ঘুমের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বিষণ্নতার একটি সাধারণ লক্ষণ।
৬. ক্ষুধার অভাব বা অতিরিক্ত খাওয়া
বিষণ্নতা আপনার খাওয়ার অভ্যাসকেও প্রভাবিত করতে পারে। অনেক সময় বিষণ্নতায় ভোগা মানুষজন ক্ষুধার অভাব অনুভব করেন এবং অল্প খেতে শুরু করেন। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত খাওয়ার মাধ্যমে তাদের আবেগ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই দুই ধরনের আচরণই বিষণ্নতার লক্ষণ হতে পারে।
৭. আত্মবিশ্বাসের অভাব ও নিজেকে দোষারোপ করা
বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের অপর্যাপ্ত বা অযোগ্য মনে করতে শুরু করেন। তারা নিজেদের ব্যর্থতা এবং অসফলতার জন্য দায়ী করেন। আপনি প্রায়ই নিজেকে দোষারোপ করছেন বা নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন কি না, তা লক্ষ্য করুন। এটি বিষণ্নতার অন্যতম গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।
উপসংহার
বিষণ্নতা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা সময়মতো চিনতে না পারলে বড় ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি আপনার জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে উপস্থিত থাকে, তাহলে আপনাকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিতে হবে। মনে রাখবেন, বিষণ্নতা একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা এবং সঠিক সহায়তা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
আরো পড়ুন …