একবার এবং সবার জন্য বিলম্ব কাটিয়ে ওঠার টিপস

বিলম্ব বা প্রোক্রাস্টিনেশন এমন একটি সমস্যা যা আমাদের অনেকেরই জীবনের প্রতিদিনকার সঙ্গী হয়ে উঠেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমরা বারবার পেছনে ফেলে দেই এবং পরে সময়ের চাপ বা তাড়াহুড়ার মধ্যে সেই কাজগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। এর ফলে কাজের গুণগত মান কমে যায় এবং মানসিক চাপও বাড়ে। তবে ভালো খবর হলো, কিছু কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করে একবারেই বিলম্ব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। চলুন জেনে নিই এমন কিছু টিপস, যা আপনাকে প্রোক্রাস্টিনেশন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

১. কারণ চিহ্নিত করুন

প্রথম ধাপ হলো কেন আপনি কাজ পেছাচ্ছেন তা বোঝা। আপনি কি কাজটি কঠিন মনে করছেন? নাকি আপনি কাজটি করতে আগ্রহী নন? কোন বিশেষ কারণে ভয় পাচ্ছেন? কারণগুলো চিহ্নিত করা গেলে সেই সমস্যা সমাধান করাও সহজ হবে। যেমন, যদি কাজটি বড় বা কঠিন মনে হয়, তাহলে সেটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে শুরু করুন।

২. ছোট শুরু করুন

অনেক সময় আমরা বড় কোনো কাজ সামনে রেখে সেটি করতে ভয় পাই এবং কাজটি শুরু করার আগেই হাল ছেড়ে দেই। এমন ক্ষেত্রে ছোট ছোট ধাপে কাজ শুরু করা সবচেয়ে ভালো উপায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি রিপোর্ট লিখতে চান, তাহলে প্রথমে শুধুমাত্র শিরোনাম বা একটি প্যারাগ্রাফ লিখে শুরু করুন। একবার কাজ শুরু করলে পরবর্তী অংশ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

৩. To-Do লিস্ট তৈরি করুন

একটি to-do লিস্ট তৈরি করে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করুন। কাজগুলিকে অগ্রাধিকার অনুযায়ী সাজিয়ে প্রতিদিনের জন্য একটি লিস্ট তৈরি করুন। এতে কাজের বোঝা কম অনুভব করবেন এবং একটি কাজ শেষ করার পর যখন লিস্ট থেকে সেটা কেটে ফেলবেন, তখন নিজের কাজের অগ্রগতি দেখে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৪. Pomodoro টেকনিক প্রয়োগ করুন

Pomodoro টেকনিক হলো একটি সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল, যেখানে আপনি ২৫ মিনিট একটানা কাজ করবেন এবং তারপর ৫ মিনিটের বিরতি নেবেন। এটি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ কাজগুলোও ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা যায়। Pomodoro টেকনিক আপনার কাজকে আরও কার্যকর ও উৎপাদনশীল করে তুলবে।

৫. আকর্ষণহীন কাজগুলো আকর্ষণীয় করুন

কিছু কাজ করতে আমরা আগ্রহী না হওয়ার কারণেই বিলম্ব করি। এমন ক্ষেত্রে কাজগুলোকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করুন। যেমন, কাজের সময় আপনার পছন্দের সঙ্গীত শোনা বা কাজটি খেলার মতো উপভোগ্য করে তোলা। এর ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং বিলম্ব কমে যাবে।

৬. নিজেকে পুরস্কৃত করুন

কোনো কাজ শেষ করার পর নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এই পুরস্কার হতে পারে আপনার পছন্দের সিনেমা দেখা, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া, বা প্রিয় খাবার খাওয়া। পুরস্কৃত হলে মনোবল বাড়ে এবং কাজ শেষ করার প্রেরণাও পাওয়া যায়।

৭. দায়িত্ব অন্যের সাথে ভাগ করুন

কখনও কখনও আমরা কাজকে অনেক বড় বা কঠিন মনে করি এবং নিজে থেকে তা করার সাহস পাই না। এ ক্ষেত্রে, আপনি যদি কাজটি কারও সাথে ভাগাভাগি করতে পারেন, তাহলে তা সহজ হয়ে যাবে। কোনও সহকর্মী, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যকে বলুন আপনার কাজের অগ্রগতি মনিটর করতে। accountability partner হিসেবে তারা আপনাকে কাজটি সম্পন্ন করতে উত্সাহিত করবে।

৮. একবারে একটি কাজ করুন

মাল্টিটাস্কিং বা একসঙ্গে একাধিক কাজ করার চেষ্টা আপনাকে আরো বিলম্বের দিকে নিয়ে যায়। একটি কাজ শেষ না করেই অন্যটির দিকে ঝুঁকলে মনোযোগ হারাবেন এবং কোনো কাজই শেষ হবে না। বরং একসঙ্গে একটি কাজের দিকে পুরো মনোযোগ দিন, কাজটি সম্পন্ন করার পর পরবর্তীটির দিকে এগোন।

৯. ডেডলাইন তৈরি করুন

প্রতিটি কাজের জন্য নিজস্ব ডেডলাইন বা সময়সীমা নির্ধারণ করুন। যখন কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় থাকবে, তখন আপনি কাজটি সময়মতো করার জন্য চাপ অনুভব করবেন। কিন্তু সময়সীমা শুধুমাত্র মানসিকভাবে কাজটি শেষ করার জন্য নয়, বরং বাস্তবিকভাবে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসেবেও ধরে নিতে হবে।

১০. “না” বলা শিখুন

অনেক সময় আমরা কাজ পেছাতে থাকি কারণ আমরা নিজের উপর অনেক বেশি দায়িত্ব চাপিয়ে দেই। সবকিছু করা সম্ভব নয়, তাই অপ্রয়োজনীয় বা অগ্রাধিকারহীন কাজগুলোকে “না” বলা শিখুন। এতে আপনি মূল কাজগুলোতে পুরো মনোযোগ দিতে পারবেন এবং বিলম্ব কমে যাবে।

১১. নিজেকে ক্ষমা করুন

কাজ বিলম্ব করার জন্য নিজেকে দোষারোপ করা এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করে, যা আরও বিলম্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই নিজেকে দোষ না দিয়ে একবার বিলম্ব হলেও নতুন করে শুরু করুন এবং প্রক্রিয়ায় নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। ইতিবাচক মনোভাব আপনার কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

১২. নিজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু ও শেষ করার চেষ্টা করুন। একটি নির্দিষ্ট রুটিন বা সময়সূচী আপনাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে সাহায্য করবে এবং আপনি কাজগুলিকে সময়মতো সম্পন্ন করতে পারবেন।

উপসংহার

প্রোক্রাস্টিনেশন কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়, তবে কিছু কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করলে আপনি এটি মোকাবিলা করতে পারবেন। মূল কথা হলো, কাজ শুরু করা এবং ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া। অগ্রাধিকার ঠিক করে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে একদিন আপনি নিশ্চিতভাবেই প্রোক্রাস্টিনেশনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এবং দিনটিকে আরও উৎপাদনশীল করে তুলতে পারবেন।

আরো পড়ুন …..

Leave a Comment